
জাহিদ হাসান মিলু : ন্যায়বিচার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে—এই ধারণা এখন অতীত। ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি লিগ্যাল এইড কার্যক্রম দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক মানুষের জন্য ন্যায়ের দরজা উন্মুক্ত করেছে নতুনভাবে। মামলা-মোকদ্দমার দীর্ঘসূত্রতা, বিশাল খরচ ও আইনি জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত ও মানবিক সমাধানের একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস।
১৯৯৭ সালে সেবা যাত্রা শুরুর পর ধীরে ধীরে বিস্তৃত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি আরও গতিশীল হয়েছে। বর্তমানে লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মো. মজনু মিয়া দায়িত্ব নেওয়ার পর অভিযোগ গ্রহণ, যাচাই, মধ্যস্থতা ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে স্পষ্ট উন্নতি এসেছে। সেবার পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি মানুষের আস্থাও দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক বছরে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা রেকর্ড—৫২২ জন :

সাম্প্রতিক একটি সেমিনারে উপস্থাপিত হয় অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী একটি ঘটনা:
৩৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে ভুল বোঝাবুঝি ও পারিবারিক বিরোধের কারণে এক দম্পতির সন্তানরা মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সম্পর্কের জট খুলতে কেউ সফল হননি। পরে অভিযোগ করা হলে লিগ্যাল এইড অফিস উভয় পক্ষকে ডেকে মধ্যস্থতা করে। কোনো খরচ ছাড়াই মা আবার ফিরে পান সন্তানদের। এই ঘটনার বর্ণনায় সেমিনারে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
জমি-বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকর ভূমিকা:
জমি–জায়গা নিয়ে ঝামেলা ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য দীর্ঘদিনের সমস্যা। লিগ্যাল এইড অফিস মাঠপর্যায়ে নেমে পরিমাপ, নথি যাচাই, সীমানা নির্ধারণ করে এসব বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তেমনি এক ভুক্তভোগী জমির মালিক পারুল বেগম বলেন, বছরের পর বছর জমি নিয়ে আমাদের ঝামেলা চলছিল। লিগ্যাল এইড অফিস সব কথা শুনে সঠিক বাটোয়ারা নির্ধারণ করল। মনে হলো বোঝা নেমে গেল। আমরা ন্যায্যটুকুই পেয়েছি।
আরেক মালিক ইমদাদুল হক বলেন, নিজেদের চেষ্টায় বারবার সমস্যা তৈরি হত। শেষে লিগ্যাল এইড মাঠে গিয়ে নথি দেখে সীমানা ঠিক করে দেয়। এখন কোনো বিরোধ নেই। এ ধরনের সমাধান শুধু পরিবার বা দুই পক্ষকে নয়, পুরো সমাজকেই বিরোধ ও উত্তেজনা থেকে মুক্ত করে।
ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘লিগ্যাল এইড দরিদ্র মানুষকে আইনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু মামলা নয়, সমঝোতা–মধ্যস্থতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান সমাজে স্থিতিশীলতা বাড়াচ্ছে।’
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. মজনু মিয়া বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে আর্থিক কারণে আইন থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা সরকারি খরচে মামলা পরিচালনা থেকে শুরু করে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি—সব ধরনের সহায়তা দিই।’ তিনি আরও বলেন—‘জমি-বিরোধ, পারিবারিক বিরোধ, দেনমোহর, ভরণপোষণ, এমনকি আপসযোগ্য ফৌজদারি মামলারও সমাধান দেয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে নথি যাচাই ও উভয় পক্ষকে নিয়ে বসার মাধ্যমে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে।’